ল লাইফ রিপোর্ট: অনাদরে-অবহেলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মালা রউথের মারা যাওয়া নিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু।
‘মালা দিদি ও আমাদের দায়বদ্ধতা’ শিরোনামে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন,‘যারা সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত আইনজীবী হিসেবে পেশা পরিচালনা করেন এডভোকেট মালা রাউথ এর নাম শুনেনি এরকম আইনজীবী নেই। আজকে সুপ্রিম কোর্ট বারের এস এম এস ‘র মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাদের প্রিয় মালাদি গত ১৯ মার্চ’২১ ধামরাই ‘তে তাঁর বোনের বাসায় অবস্থানকরাকালিন করোনা মহামারীতে চলে গেলেন আমাদের না বলে।
দিদি তোমাকে আমরা জীবদ্দশায় মূল্যায়ন করিনি, সঠিক মর্যাদা ও ভালোবাসা দেইনি বলে স্বয়ং স্রষ্টা প্রিয় সৃষ্টির অবমূল্যায়ন দেখে সহ্য করতে না পেরে একান্তই নিরবে, নিভৃতে বেশী ভালোবাসা ও মর্যাদা দেওয়ার প্রত্যয়ে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে। দিদি তোমারওতো মূল্যায়ন, মর্যাদা ও ভালোবাসা পাওয়ার কথা ছিলো, তুমি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে ভর্তি হয়ে মুজিবাদর্শের ছাত্র সংগঠনে যুক্ত হয়ে এল.এল.এম করার পর ১৯৮৮ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার পর, ১৯৮৯ সালে সুপ্রীম কোর্ট বারে সদস্যভুক্ত হয়ে পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলে। তোমার ভাগ্য এক দিকে দাম্পত্য জীবনের হতাশা, হতাশা থেকে পেশার মাঝে অনেক ছেদ, তুমি নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে নিম্ন আদালত থেকে আপীল বিভাগ পর্যন্ত নিজেই মামলা পরিচালনা করে জয়ী হয়েছিলে। শুধু জয়ী করতে, মূল্যায়ন করতে পারিনি আমরা তোমাকে।
বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ বলতে ছিলে পাগল বা একাট্টা কিন্তু এই সরকার চার বার ক্ষমতায় আসলো, তোমার চেয়ে অনেক অযোগ্য, অপাংক্তেও, হাইব্রিড লোকও শুধুমাত্র তদবীর করে আইন কর্মকর্তা হয়েছে। হয়তো তুমি এসময়ের জন্য ছিলেনা সুন্দরী, করতে পারতেনা চাহিত তদবীর তাই কেঁদে কেঁদে সময় নষ্ট করতে করতে আমাদের অন্তরালে চিরদিনের জন্য চলে গেলে।
আমরা কি তোমার মূল্যায়নের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে পারবো, না পারবো না? কত শত শত দিন তুমি দুঃখের কথাগুলো বলতে, আমি সব সময় শুনতাম, সবাইকে বলতাম তাঁর মুল্যায়ন হওয়া উচিত।তাঁর দুঃখের কথা না শোনা মানে পাপ, মূল্যায়নতো করতে পারিনা তাঁর কথাতো শুনতে পারবো। দায়ত্বশীল ব্যাক্তিদের একাধিকবার বলে ব্যর্থ হয়েছি। সর্বশেষ তুমি ১৮ ফেব্রুয়ারী প্রিয় গৌরাঙ্গ দাদাকে নিয়ে আসলে আমার ৩০০৮ নং এনেক্সের রুমে, আমি ভার্সুয়ালী মামলা করতে ছিলাম কিন্তু মামলার ফাঁকেফাঁকে প্রায় এক ঘন্টারও বেশী সময় কাঁটালে, লাঞ্চ করতে বললাম কিন্ত লাঞ্চ না করে শুধু একটা জুস আর পেয়ারা খেয়ে অবমূল্যায়নের কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে বলে চলে গেলে।
যাওয়ার সময় আবার বললে, সাজু তুই সম্পাদক হলে আমাকে দেখিস দাদা। তুমি আরো কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলে “পৃথিবীতে আমি বড় অসহায়, আমাকে কেউ বুঝলো না” ? হায়াত, মউত, রিজিক ও সম্মানের মালিক আল্লাহ কিন্তু কোনদিন কি মালাদি’কে পাব, পাবোনা? মালাদি’র অনেক অন্তঃ কান্নার স্মৃতি বলে শেষ করা যাবে না। আজকে মালাদি নেই, কিন্তু তাঁর ডিপার্টমেন্টের একমাত্র ভাই, আইনাঙ্গনের প্রিয় ভাই, সৎ ও সততাকে যিনি সব সময় লালন করেন সেই আব্দুর নূর দুলাল ভাই স্মৃতিচারণ করলেন মালাদি’কে নিয়ে, সুন্দর অভিব্যাক্তি ব্যক্ত করলেন প্রিয় জেসমিন আপা ও আমাদের ছোট বোন খায়রুন্নেছা (নাসিমা)। আমরা কেন দু’কথা লিখি, শুধুমাত্র সঠিক সময়ে, সঠিক মর্যাদা ও সম্মান জীবদ্দশায় দেওয়ার জন্য। দু’দিন পর আমরা আবার ভূলে যাই।আল্লাহ আমাদের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের মনে রহমত দিয়ে দাও, এরকম মালাদি’র মতো কোন ত্যাগী কর্মীকে যেন না হারাই, আমরা সঠিক সময়ে, সঠিক মর্যাদা ও সম্মান দিতে পারি তাহলে দায়বদ্ধতা থেকে হলেও কিছুটা নিস্কৃতি পাবো। মালাদি তুমি পরপারে ভালো থেকো, আমাদের মাফ করে দিও।’