ল লাইফ রিপোর্ট:মামলায় আসামির বয়স লেখার ক্ষেত্রে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত আসামির বয়সের বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত ইচ্ছেমতো পুলিশকে নিজ থেকে বয়স নির্ধারণ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।
খুলনার প্রদীপ দে ওরফে পাদু হত্যা মামলার এক আসামির জামিন আবেদনের ওপর শুনানিকালে এ পর্যবেক্ষণ দেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত ওই আসামির সত্যিকারের বয়স কত সে বিষয়ে আগামী ১ জুলাই আদালতে লিখিত প্রতিবেদন দিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
শুনানিতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান সিরাজ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, খুলনার হরিণটানা থানার জয়খালী গ্রামের একটি হাঁসের খামারে ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রদীপ দে ওরফে পাদুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ওই খামারের হাঁস চুরি করতে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মী পাদুকে হত্যা করেন আসামিরা।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ কয়েকদিনের মধ্যেই শাকিব হাওলাদার ও শামীম মোড়লকে গ্রেফতার করে। এরপর ওই দুই আসামি ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে পাঁচ আসামির মধ্যে চারজনের বয়স দেখানো হয়েছে ১৮ বছরের নিচে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই মামলার আসামি শাকিব হাওলাদারের জামিন আবেদন করা হয় হাইকোর্টে। ওই আবেদনের ওপর শুনানিকালে আদালত নথিপত্রে দেখতে পান যে, ওই আসামির বয়স দুরকম লেখা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের পর পুলিশ যে ফরোয়ার্ডিং দেয় তাতে আসামির বয়স উল্লেখ করে ২০ বছর। আর অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) উল্লেখ করা হয়েছে ১৬ বছর।
তিনি বলেন, এই ১৬ বছর প্রমাণ করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের একটি জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে। শুধু এক আসামি নয়, মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে চার আসামির বয়সই পরিবর্তন করে ১৬ এর নিচে দেখানো হয়েছে। এটা দেখার পর আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই রাসেল হোসেনকে তলব করেন আদালত। আদালতের আদেশে আজ এসআই রাসেল হোসেন আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আসামির বয়সের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) আদালতকে জানান, আসামি শাকিব হাওলাদারের জন্ম ২০০৪ সালের ২ মার্চ। সেই হিসেবে (জন্মসনদ অনুযায়ী) তার বয়স ১৬ বছর দেখানো হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার এই বক্তব্যের পর আদালত পুলিশ ফরেয়ার্ডিং ও জবানবন্দি দেওয়ার সময় ২০ বছর উল্লেখ করার কথা তুলে ধরে আদালত বলেন, অকাট্য প্রমাণ ছাড়া বা ভালভাবে যাচাই-বাছাই না করে ইচ্ছেমতো বয়স লিখতে পারেন না। ভবিষ্যতে জন্মসনদ, শিক্ষাসনদসহ সংশ্লিষ্ট সব সনদ যাচাই-বাছাই করেই যেন বয়স উল্লেখ করা হয়। আগামী ১ জুলাই বয়স নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্ট একটি গাইডলাইন দিতে পারেন বলে ঢাকা পোস্টকে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম।
এম/এ/হ