ল লাইফ রিপোর্টঃকরোনায় আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে ব্যয়বহুল হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিকল্প হিসেবে বুয়েটের উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ যন্ত্রের উৎপাদনের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে লিখিত আবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে বুয়েটের উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ নামক স্বল্প মূল্যের সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইসের অনুমোদনের বিষয়ে ব্যবস্থার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সময় হাইকোর্ট আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য তার মুখ্য সচিবকে লিখিতভাবে জানান। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকেও জানান।’
অক্সিজেট যন্ত্রটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি মিলছে না বলে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনার পরে সোমবার (৫ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল একক বেঞ্চ এ কথা বলেন।
এর আগে ‘অক্সিজেট’ যন্ত্রটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি মিলছে না বলে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এনে তা উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক। হাইকোর্টের ভার্চুয়াল একক বেঞ্চে শুনানিতে যুক্ত হয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘বুয়েটের উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ যন্ত্রটি এরই মধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দুটি ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিভাইসটি দিয়ে হাসপাতালের সাধারণ বেডেই ৬০ লিটার পর্যন্ত হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। একটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার জন্য খরচ যেখানে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা, সেখানে বুয়েটের আবিষ্কৃত এই যন্ত্রটির উৎপাদন খরচ পড়বে মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ) ‘অক্সিজেট’ যন্ত্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমতি দিচ্ছে না।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘আমাদের তো আবার বিদেশ থেকে কেনাকাটায় আগ্রহ বেশি। সে যাই হোক, এখানে প্রশ্ন হচ্ছে বুয়েট কি যন্ত্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদন করতে পারবে? উৎপাদন ও কেনাকাটার ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালার বিষয় তো রয়েছে।’
আদালত আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। উনার কাছে ভারো জিনিসের খবর গেলে তিনি তা বিবেচনা করবেন আশা করি।’
আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে অক্সিজেটের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের কয়েকজন করোনা রোগীকে এ যন্ত্র দিয়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ডিজিডিএ এটা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না। তারা বলেছে, কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য না হলে অনুমতি দেয়া সম্ভব নয়।
তখন আদালত বলেন, ‘সরকারের ক্রয়নীতি আছে। বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।’
এ সময় আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, ‘হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সংকটে প্রাণহানি বাড়ছে। সেক্ষেত্রে অক্সিজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘এ ধরনের ডিভাইস নিয়ে পাবলিক ক্যাম্পেইন দরকার। আপনি (আইনজীবী) এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। তার নজরে আনার জন্য মুখ্য সচিবকে চিঠি দেন।’
পরে আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানিয়েছি। মুখ্য সচিবকেও জানাব। আশা করছি ভালো কিছু হবে।’
এম/এ/হ