ল লাইফ রিপোর্ট: পাশাপাশি তিনটি লিফট, তাতে উঠার জন্য তিনটি লাইনে দাঁড়িয়ে অন্তত ১২০ জন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী। প্রতিটি লাইনে গাঁ-ঘেষে দাঁড়িয়ে সবাই। লিফট আসা মাত্রই হুড়মুড়িয়ে ১২-১৪ জন করে উঠে পড়েন লিফটে। দূরত্ববিধি মেনে চললে একটি লিফটে ৩ জনের বেশি ওঠার কথা নয়। এজলাসেও একই হাল। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি লোক নিয়ে বিচার কার্য চলছে। আদালতের আশপাশেও আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের জটলা গেলে আছে। সর্বত্রই ঠাঁই নেই অবস্থা।
রাজধানীর পুরান ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেল। শুধু সিজেএমই নয়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও জেলা জজ আদালতেরও একই অবস্থা।
মাস্ক ব্যবহারেও রয়েছে চরম অবহেলা। বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশেই করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সরকার নতুন করে ১৮ দফা নির্দেশনাও জারি করেছে। কিন্তু আদালতে উপেক্ষিতই থাকছে স্বাস্থ্য বিধি। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, যার যার সুরক্ষা তার তার কাছে। আমি ভিড়ের মধ্যে যাব কিনা- সেটা আমার কাছে। সরকার ও বিচারকের পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। অনেকে মানছেন, অনেকে মানছেন না। তবে আদালত প্রাঙ্গণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মাল স্ক্যানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সরকারের নির্দেশনাগুলো নিজ দায়িত্বে পালন করতে হবে। বিচারপ্রার্থী আলী হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এখানে (আদালত প্রাঙ্গণে) ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। লিফটে ঠেলাঠেলি, এজলাসে প্রবেশেও একই অবস্থা। আদালত প্রাঙ্গণের সর্বত্রই আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের ভিড়ভাট্টা লেগেই আছে। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
জানা গেছে, সারা দেশে নিম্ন আদালতে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস মোকাবিলায় কিছুটা প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। যত্রতত্র ফেলে রাখা ময়লা-আবর্জনা থেকে শুরু করে চারপাশে দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ বিদ্যমান। নেই কোনো প্রবেশ গেট, থাকলেও চেকিংয়ের ব্যবস্থা নেই। কোথাও হাত ধোয়ার বেসিন ও কল বসানো হলেও তার অনেকগুলোই নষ্ট। কারাগার থেকে আসামিদের হাজতখানায় এনে রাখা হলেও, তার পরিবেশও নাজুক।
করোনা সংক্রমণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে মহানগর দায়রা জজ থেকে আদালত প্রাঙ্গণে সুরক্ষাবিধি অনুসরণের অনুরোধ করা হয়েছে। এগুলো হলো- আদালত ভবনে প্রবেশের আগে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া, আদালত প্রাঙ্গণে সার্বক্ষণিক ফেস মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরা, ভিড় পরিহার করা ও ৬ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, করোনার লক্ষণ দেখা দিলে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকা, অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ব্যতীত আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত না হওয়া, এজলাস কক্ষে একত্রে ৬ জনের বেশি ব্যক্তির উপস্থিতি পরিহার করা, কাজ শেষে হওয়া মাত্রই আদালত ভবন ত্যাগ করা, যেখানে সেখানে থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকা এবং আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত সব প্রকার অস্থায়ী/স্থায়ী/ভ্রাম্যমাণ দোকান বন্ধ রাখা। এসব মেনে না চললে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। বাস্তবতা ভিন্ন।