বাংলাদেশের আইনের বিধান মোতাবেক বহুবিবাহ অপরাধ কিনা বা দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগে কিনা অনেকেই এধরনের প্রশ্ন করে থাকেন। সেক্ষেত্রে এই বিষয়ে বাংলাদেশে আইন আছে কিনা বা আইন থাকলে সেই আইনের বিধান সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। আমাদের দেশে এ বিষয়ে একটি আইন আছে। আইনটি হলো “মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১”। যাহা সমগ্র বাংলাদেশের সমস্ত মুসলিম নাগরিকদের উপর তাহারা যেখানেই থাকুক না কেন ইহা প্রযোজ্য হইবে। বহুবিবাহ বিষয়ে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ৬ ধারায় বিশদভাবে উল্লেখ্য আছে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ৬ ধারার বিধান হইতেছে:
“৬। বহুবিবাহ:
(১) কোন লোকের বিবাহ বলবৎ থাকিতে সে সালিশী কাউন্সিলের লিখিত পূর্বনুমতি ব্যতীত অন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিবে না বা ঐরূপ অনুমতি ব্যতীত অনুষ্ঠিত কোন বিবাহ ১৯৭৪ সনের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) অধ্যাদেশ এর অধীনে রেজিষ্ট্রিকৃত হইবে না।
(২) ১ নং উপধারা অনুসারে অনুমতির দরখাস্ত নির্ধারিত ফি সহ চেয়ারম্যানের নিকট নির্দিষ্ট দফতরে দাখিল করিতে হইবে ও উহাতে প্রস্তাবিত বিবাহের কারণসমূহ এবং অত্র বিবাহের ব্যাপারে বর্তমানে স্ত্রী কিংবা স্ত্রীগণের সম্মতি লওয়া হইয়াছে কিনা উহার উল্লেখ থাকিবে।
(৩) ২ নং উপধারা অনুসারে দরখাস্ত গ্রহন করিবার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারীকে ও বর্তমান স্ত্রী কিংবা স্ত্রীগণের প্রত্যেককে একজন করিয়া প্রতিনিধি মনোনীত করিতে বলিবেন। উক্তরূপে গঠিত সালিসী কাউন্সিল প্রস্তাবিত বিবাহ প্রয়োজনীয় ও ন্যায়সঙ্গত বলিয়া মনে করিলে যুক্তিযুক্ত বলিয়া গণ্য হইতে পারে এমন সমস্ত শর্ত থাকিলে তৎসাপেক্ষে প্রার্থিত আবেদন মঞ্জুর করিতে পারিবেন।
(৪) দরখাস্তের বিষয় নিস্পত্তি করিবার জন্য সালিশী কাউন্সিল নিস্পত্তির কারণাদি লিপিবদ্ধ করিবেন। দির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে কোন পক্ষ নির্দিষ্ট ফি প্রদানক্রমে নির্দিষ্ট দফতরে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের নিকট পুনর্বিবেচনার জন্য দরখাস্ত দাখিল করিতে পারে; তাহার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে ও কোন আদালতে এই সমন্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
(৫) কোন লোক যদি সালিশী কাউন্সিলের অনুমতি ব্যতীত কোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তবে সে,
(ক) বর্তমান স্ত্রী কিংবা স্ত্রীগণের তলবী ও স্থগিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষনাৎ পরিশোধ করিতে হইবে। উক্ত টাকা উক্তরূপে পরিশোধ না করা হইলে ভূমি রাজস্বরূপে আদায়যোগ্য হইবে; এবং
(খ) অভিযোগে অপরাধ সাব্যস্থ হইলে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড কিংবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে বা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডনীয় হইবে।”
মুসলিম পারিবারিক আইনে বিধান মোতাবেক ইহা স্পষ্ট যে, বর্তমানে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগনের অনুমতি ব্যতীত বহুবিবাহ একটি শাস্থিযোগ্য অপরাধ। তবে যুক্তিসঙ্গত কারন, বর্তমানে স্ত্রী বা স্ত্রীগনের অনুমতি ও সালিশী পরিশোধের পূর্ণাঙ্গ অনুমতি পেয়ে পুনরায় বিবাহ করিলে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর বিধান মোতাবেক শাস্থিযোগ্য অপরাধ নহে।
বহুবিবাহের অপরাধের প্রতিকার প্রার্থনা করিয়া বর্তমান স্ত্রী বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আমলী আদালতে স্বামীকে আসামী করিয়া সি, আর মামলা দায়ের করিতে পারিবে। সেক্ষেত্রে মামলা দায়ের করার সময় নালিশী দরখাস্তে অবশ্যই মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ধারা ৬(৫) বিধান মোতোবেক শাস্থি প্রার্থনা করিতে হইবে। মামলা দায়েরের সময় অনুমতি ব্যতীত করা বিবাহের কাবিননামা বিজ্ঞ আদালতে ফিরিস্তি সহকারে দাখিল করিতে হইবে। অভিযোগে অপরাধ সাব্যস্থ হইলে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড কিংবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে বা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডনীয় হইবে। তবে বর্তমানে বহুবিবাহের প্রচলন আগের তুলনায় কম।
অ্যাডভোকেট মো: আলমগীর হোসেন
আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্ট।