ল লাইফ রিপোর্টঃ হবিগঞ্জ জেলা বারের সভাপতি বলেন, তথ্য জালিয়াতির ঘটনায় এক জরুরি সভা থেকে আইনজীবী কুতুব উদ্দিন জুয়েলকে জেলা বার থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। বারের জরুরি সভায় সাধারণ সম্পাদক সামছুল হকসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
হবিগঞ্জ জেলায় মাদক মামলায় গ্রেফতারকৃত ৯৫ ভাগ আসামীই ছিলেন হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য কুতুব উদ্দিন জুয়েলের মক্কেল। মাদক ব্যবসায়ীদের একমাত্র আস্থাভান কুতুব উদ্দিন | চুক্তির মাধ্যমেই আদালতে জামিনের আবেদন করতেন। অবাক করার মত হলেও সত্য মােটা অঙ্কের চুক্তির সাথেই জামিন হয়ে যেত আসামীদের।
বুধবার (৩০শে জুন) বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির মুলতবী সাধারণ সভায় তাকে আজীবনের জন্য হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ২য ভবনে জেলা সমিতির সভাপতি আবুল মনসুর এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় ২১জন আইনজীবী বক্তৃতা করেন।
কুতুব উদ্দিন জুয়েলের বিরুদ্ধে গত ২ জুন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযােগ দায়ের করেছেন তরুণ আইনজীবী আশরাফুল আলম ফসল।পরে আরেকটি অভিযােগ দাযের করেন মিজানুর রহমান। এসকল অভিযােগের আলােকে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ২৭ মে তথ্য জালিয়াতি করে আদালতকে ভূল বুঝিযে দুই মাদকবারীকে জামিনে মুক্ত করেন আইনজীবী কুতুব উদ্দিন জুয়েল। এই ঘটনা জানাজানির পরই আদালত প্রাঙ্গণে শুরু হয় হট্টগােল।
জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল মাধবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর মুক্তিযােদ্ধা চওর এলাকা থেকে ৫০ বােতল ফেন্সিডিলসহ দুই মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মাদককারবারী নারায়ণগঞ্জের সােনারগাঁ থানার গােয়ালদী গ্রামের হাবিবুর রহমান ভূইয়ার ছেলে মামুন ভূইযা (৩৭) ও নরসিংদীর মাধবদী থানার মৃত নুর হােসেন এর ছেলে নবীর হােসেন (৩২)।
পরে তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। পরে তাদের আইনজীবী হিসাবে মিজানুর রহমান বিভিন্ন সময় আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু গত ২৩ মে আসামীদের স্বজনরা মিজানুর রহমান এর কাছ থেকে মামলাটি নিয়ে কুতুব উদ্দিন জুয়েল নামে অন্য একজন আইনজীবির সাথে চুক্তি করে দ্রত জামিন করানাের শর্তে জমা দেন ।
পরে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে হবিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাসিম রেজার আদালত থেকে গত ২৭ মে দুই আসামীর জামিন হয়। দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদনে বলা হয় আসামীরা ৯ | ফেব্রুয়ারী থেকে জেল হাজতে আছে। অথচ ওই তারিখের অনেক পরে এই ঘটনা ঘটে।
আবার দায়রা জজ আদালতে আদালতের ১২ মে তারিখের আদেশের বিপরীতে আমিন প্রার্থনা করলেও ওই দিন | নি আদালতে জামিন প্রার্থনা করা হয়েছিল একজনের। কিন্তু জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দুইজনের জামিন করেন কুতুব উদ্দিন জুয়েল।
পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে ভারপ্রাপ্ত দায়রা জজ গত ২ জুন এক আদেশে নবীর হােসেনের জামিন বাতিল করেন। পরে ১০ জুন অপর আসামী মামুন ভূইয়ারও জামিন বাতিল করেন তিনি।একই সাথে কুতুব উদ্দিন জুয়েলকে কেন তার সনদ বাতিলের জন্য বার কাউন্সিলে সুপারিশ করা হবে তার কারণ দর্শানাের জন্য তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে জানাতে বলেন।
আইনজীবী কুতুব উদ্দিন জুয়েল কারণ দর্শানাের জবাবে ভার অজান্তে এই ভুল হয়েছে বলে জবাব প্রদান করলেও এতে বিচারক সন্তুষ্ট না হয়ে বার কাউন্সিলের সচিব বরাবর তার সনদ বাতিলের সুপারিশ করেন।
সনদ বাতিলের সুপারিশে বলা হয় আসামী নবীর হােসেনের জামিন নিয়ে আদালত নামঞ্জুরের বিষয়টি অবগত থাকার পরও বেআইনীভাবে ফ্রড প্র্যাকটিস করে জামিন নিয়ে অপরাধ করা ছাড়াও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নকল সৃষ্টি করে শুদ্ধ হিসাবে ব্যবহার করে সে ফৌজদারী অপরাধ করেছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবুল মনসুর জানান, জালিয়াতির দায়ে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আজীবনের জন্য হবিগঞ্জ জেলা বার থেকে বহিস্কৃত।
এ বিষয়ে বহিস্কৃত আইনজীবি কুতুব উদ্দিনের সাথে যােগাযােগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। যেহেতু আমার সনদ বাতিলের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সুপারিশ করা হয়েছে সেহেতু আলাদা ভাবে হবিগঞ্জ জেলা বার আমার বিরুদ্ধে একই ঘটনায় আলাদা প্রদক্ষেপ নিতে পারে না, আমি ন্যায় বিচার বঞ্চিত।
একজন জুনিয়র আইনজীবী হিসাবে পেশাজীবনের শুরুতেই আদালতের চোখে ধূলাে দেয়াসহ আদালতের কাগজ জাল করার মত ফৌজদারী অপরাধে সম্পৃক্ত করায় ভবিষ্যতে তার পক্ষে আরও বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আইন পেশার মত মহান একটি পেশাই শুধু কলংকিত হবে না, বার ও বেঞ্চের সমন্বয়ে গঠিত বিচারালয়ের প্রতিও সাধারণ মানুষের আস্থা বিনষ্ট হবে।