ল লাইফ রিপোর্টঃ চট্টগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার তদন্ত করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতদিন ধরে মামলাটি তদন্ত করছিল চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
শনিবার (২৯ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা। তিনি বলেন, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করবে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) এই সংক্রান্ত আদেশ পেয়েছি। এরপর অফিসিয়াল প্রসিডিউর শুরু করা হয়েছে। একটা মামলা অন্য জায়গা থেকে আসলে নথিপত্র পেতে হয়। এগুলোর প্রক্রিয়া চলছে।
গত ৭ এপ্রিল পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকার নাহার ভিলায় মোরশেদ আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি চার পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট লিখে যান। এর একটি অংশে লেখা ছিল, ‘আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবে, আরেকটু দেখি, আরেকটু দেখি করতে করতে দেনার গর্তটা অনেক বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। যারা কোনো টাকাই পেত না, তাদের দিতে গিয়ে এখন সত্যিকারের দেনায় জর্জরিত। বেঁচে থাকলে এ দেনা আরও বাড়বে। তাছাড়া পরিচিতগুলোই এখন চেপে ধরেছে বেশি। এই লোড আমি আর নিতে পারছি না, সত্যি পারছি না।’
আত্মহত্যার ঘটনায় মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। এতে মোরশেদের দুই ফুফাত ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী ও পারভেজ ইকবাল চৌধুরীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রথমে এ মামলার তদন্ত করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরে মামলার তদন্ত যায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। আর সর্বশেষ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। গোয়েন্দা পুলিশ এই মামলার আসামি পারভেজ ইকবালের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. আরাফাত নামে একজনকে ২৭ এপ্রিল গ্রেফতার করে।
মামলার পর প্রথমে চট্টগ্রামে ও পরে ঢাকায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রয়াত মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান। ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান অভিযোগ করে বলেছিলেন ‘আমার স্বামীর ফুফাত ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী ও পাঁচলাইশের সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীনের কাছে থেকে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যবসাসূত্রে ২৫ কোটি টাকা নেয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এর বিপরীতে লভ্যাংশসহ তাদের পরিশোধ করা হয় ৩৮ কোটি টাকা। এরপর থেকে তারা আরও টাকা দাবি করতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘তারা আমার স্বামীকে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে চাপ এবং হুমকি–ধামকি দিতে শুরু করে। ২০১৮ সালের মে মাসে আমার স্বামীকে সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিনের পাঁচলাইশের এম এম টাওয়ারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আরও ১২ কোটি টাকা বাড়তি পায় উল্লেখ করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়। মূলত ব্যবসায় তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ সুদে-আসলে ফেরত পাওয়ার পরও টাকা দাবি করে আসছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ছাড়াও বাসায় হামলা, আমাকে নির্যাতন, কন্যাকে অপহরণ এবং আমার স্বামীকে অনেকবার খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাদের চাহিদা মতো টাকা না দেওয়ায়, তাদের অমানবিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে আমার স্বামী আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নেন।’
‘আত্মহত্যার আগের দিন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রাসেল মোবাইল ফোনে আমার স্বামীকে জীবননাশের হুমকি দেন’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে ইশরাত বলেন, ‘প্রতিপক্ষের অর্থবিত্ত আর রাজনৈতিক প্রভাবের মুখে আমরা অসহায়। ফলে আমরা নিজেদের জীবন নিয়ে চরম শঙ্কিত।’
এছাড়া ২৪ এপ্রিল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাত জাহান অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলার আসামিদের অব্যাহত চাপ, হুমকি ও হামলার কারণে নিরুপায় হয়ে ব্যাংকার আবদুল মোরশেদ চৌধুরী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।’